শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের মাধ্যমে যেভাবে থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহা থেকে উদ্ধার করা হয় দুই সপ্তাহ ধরে আটকা থাকা খুদে ফুটবলারদের- সেই গল্প শিহরিত করেছে গোটা বিশ্বকেই। কিন্তু খাদ্য-পানি ও অক্সিজেনের অভাবের মধ্যেও এই শিশুদের কীভাবে ৯ দিন সেই অন্ধকার গুহায় বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাদের কোচ- সেই গল্প শুরুতে জানতে পারেননি অনেকেই। এবার উঠে এলো একাপল চ্যানথাওয়াং নামের ২৫ বছর বয়সী সেই কোচের বীরত্বের গল্প।
দলের এক সদস্যের জন্মদিন পালনে গুহায় ঢুকেছিল ওয়াইল্ড বোয়ার দলের সদস্যরা। ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী এই শিশুদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন একাপল। কিন্তু গুহায় ঢোকার পর বন্যার পানি ভেতরে ঢুকে যাওয়ায়, সেখান থেকে বেরোতে পারেনি তারা। ভেতর থেকে যোগাযোগের কোনো উপায় না থাকায় শিষ্যদের কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়- সে ব্যাপারে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছিলেন একাপল।
শৈশবেই বাবা-মা ও ভাইকে হারিয়েছিলেন একাপল। চাচার পরিবারে বড় হলেও সর্বদা দুঃখী এবং বিষণ্ন থাকতেন তিনি। অবশেষে কৈশরের এক পর্যায়ে সন্নাসী হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান তিনি। ১০ বছর সেখান থাকার পর কিছুদিন আগে তিনি ফিরে এসেছিলেন অসুস্থ দাদির দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে। জীবিকার জন্য স্থানীয় ফুটবল দলের সহকারী কোচের চাকরি নেন তিনি।
এই সন্নাসী হওয়ার প্রশিক্ষণই দারুণ কাজে দেয় একাপলের। শিশুদের তিনি শেখান ধ্যানের মন্ত্র। মেডিটেশনের মাধ্যমে কীভাবে শরীরের ক্ষয়িষ্ণু শক্তি ধরে রাখা যায় তা শিশুদের শেখান তিনি। এর মাধ্যমে সেই স্বল্প অক্সিজেন সমৃদ্ধ জায়গাটিতেও শক্ত মনোবল নিয়ে টিকেছিল শিশুরা।
এছাড়াও খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় নিজের খাবারটুকু বাচ্চাদের ভোগ করে খাওয়ান তিনি। তৃষ্ণার্ত বাচ্চাদের শেখান কর্দমাক্ত বন্যার পানি না খেয়ে গুহার দেয়ালের ছড়ার পানি পান করতে। উদ্ধারকারী দল আসা পর্যন্ত ওই পানি পান করেই বেঁচে ছিল শিশুরা। এছাড়া শিশুদের মনোবল যাতে কখনোই ভেঙে না পড়ি, সেদিকে সবসময় খেয়াল রেখেছেন। চূড়ান্ত অভিযান শুরুর আগে নিজ হাতে তিনি প্রতিটি শিশুকে তৈরি করেন।
দেশটির পুলিশ বলেছিল, তারা একাপলের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু সন্তানদের নিরাপদ রাখায় কিশোর ফুটবল খেলোয়াড়দের বাবা-মা কোচের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। কাজেই পুলিশ পরে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি। ওয়াইল্ড বোয়ারের জ্যেষ্ঠ কোচ বলেন, একাপল নিজের চেয়েও কিশোরদের বেশি ভালোবাসে।
নোপাডন কান্থাওয়াংয় নামে এক থাই নাগরিকের ১৩ বছর বয়সী ছেলেও ওয়াইল্ড বোয়ারের হয়ে খেলে। তিনি বলেন, দলের প্রতি ‘এইক’ খুবই আন্তরিক। স্কুল শেষ হওয়ার পর কিশোররা মাঠে না আসা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতেন। আমি বলতে পারি, তারা একে অপরকে খুবই পছন্দ করে।
খেলোয়াড়দের বন্ধুরা একাপলকেই সত্যিকার নায়ক বলে অভিহিত করেছে। অটাপোন ক্যামহেং নামে এক কিশোর বলল, আমি এইককে ভালোবাসি ও বিশ্বাস করি। সে-ই একমাত্র ব্যক্তি যে আমার বন্ধুদের যত্ন নেয়ার যোগ্য। সে জানায়, যারা প্রাণ নিয়ে গুহা থেকে ফিরেছে, তারা সবাই নায়ক। কিন্তু মহানায়ক হচ্ছে কোচ একাপল।